somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্ডিয়া ট্যুর ১ : ভিনদেশে হিজড়ার খপ্পরে:-/

২৭ শে মে, ২০০৮ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলকাতা থেকে যাচ্ছি আগ্রা। ট্রেনে। এক সাথে সবার সিট পাওয়া যায়নি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুই বগিতে মোট ৭৫ জন আমরা। কোথাও কোথাও ৪-৫ জনের সিট একসাথে পাওয়া গেছে। কোথাও স্থানীয়দের সাথে বদলাবদলি করে কয়েকজন একসাথে বসেছি। লম্বা জার্নি। আগের রাতে রওয়ানা দিয়েছি। দিন পেরিয়ে বিকেল দিকে গন্তব্যে পৌঁছার কথা। যার যার সীটে থাকছি কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ ট্রেনের ভেতরেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। আড্ডা মারছি দূরে বসা বন্ধুদের ওখানে গিয়ে।
নাম জানা- নাজানা স্টেশনে ট্রেন থামছে। লোক উঠছে-নামছে। উঠছে ভিক্ষুকরাও। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বয়সী ভিক্ষুক পর্যন্ত। প্রথম দু-একজনকে দু-এক রূপি দিলেও পরে যখন দেখলাম, একের পর এক আসছেই, দেয়া বাদ দিলাম। 'মাফ করেন', 'যান, নাই' বলে (ওরা কতটুকু বুঝলো কে জানে, হিন্দি ভাল পারি না বলে বাংলায়ই বললাম।), অথবা নজর না দিয়ে এড়ালাম এদের। একটু পর এলো তিন হিজড়া। দেশে রাস্তা-ঘাটে হিজড়া দেখেছি কিছু। কিন্তু সরাসরি বাতচিৎ হয়নি কখনো। তো এক হিজড়া দুই হাতে তাদের স্পেশাল তালি (সেটা যে 'হিজড়া স্পেশাল' তা জেনেছি এই ঘটনার পর) বাজিয়ে বললো, ' ওয়ে হিরো কুছ দো না।' ( হিন্দি আমার ভুল হতে পারে, তবে এ ধরণেরই কিছু ছিল)। আমি আগের মতো পাত্তা না দিয়ে গল্প চালিয়ে গেলাম সঙ্গীদের সাথে। ওরাও হিজড়াদের টাকা-পয়সা দেবে এরকম কোন ভাব দেখা গেল না। ওদের কাছে হিজড়ারা কিছু চাইলোও না। তারা পড়লো আমাকে নিয়েই। হিন্দিতে টানা কথা বলে গেল। কি বললো পুরোপুরি না বুঝলেও 'কেন দিবিনা?, তুই কী ভীষণ কিপটে!, দে না, দোয়া করবো, '- এইগুলোই ছিল কথার সারাংশ। সঙ্গে তাদের অঙ্গভঙ্গি ক্রমেই বিরক্তিকর হয়ে উঠলো। এই আমার পায়ে হাত দিচ্ছে, পরক্ষণেই মাথার টুপি ধরে টান দিচ্ছে, গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি প্রথমে ধমকে উঠলেও পরে একদমই চুপ মেরে গেলাম। তখন আমার সাথে বসা দুইজন, সামনের সীটে একজন। তিনজনই আমাদের ব্যাচেরই মেয়ে। আরও একটা ছেলে ছিল, কেবল উঠে গেছে। পরে জেনেছি, হিজড়া আসছে দেখতে পেয়ে সে আমাকে না জানিয়ে চম্পট দিয়েছে।
আমার দুর্দশা দেখে মেয়েরা তো হেসেই কুল পায় না। অন্য পাশের সীটে বসা স্থানীয় কয়েকজনও দাঁত বের করে হাসছে। এদের হাত থেকে কিভাবে উদ্ধার পাব ভেবে পাচ্ছি না, আবার জেদও চেপে গেছে- এদেরকে এক পয়সাও দেব না। কিন্তু পরিস্থিতির ক্রমে আরও অবনতি ঘটলো। এক হিজড়া আমার হাত ধরে টান দিয়ে তার বুকে রাখার চেষ্টা করলো। ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিতেই আরেক হিজড়া সামনে এলো। ' দিবি না, দিবি না- তাহলে দেখ' -এই জাতীয় কিছু একটা বলে ঝট করে নিজের প্যান্টের চেন খুলে ফেললো। এতক্ষণে মেয়েদের হাসি একটু কমলো। একজন চিৎকার দিয়েই উঠলো। আমি মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম জানালার দিকে। ( যদিও পরে এই মেয়েরা প্রচার করেছে, আমি মোটেও জানালার দিকে তাকাইনি, পুরোটা সময় 'উৎসুক' দৃষ্টিতে হিজড়াটার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। - আমি তীব্র প্রতিবাদ করেও সত্যটা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি আজও)। তখনও আমি মানিব্যাগ বের না করার সিদ্ধান্তে অটল। চিৎকার করে ওঠা মেয়েটা দ্রুত ওর ব্যাগ থেকে দশ রূপি বের করে দিয়ে দিল। 'দেখ , বোন কেমন ভাল, তোর মতো কঞ্জুস না, বোনের ভাল জামাই মিলবে'- জাতীয় কথা বলে আমার মাথা থেকে টুপিটা টান দিয়ে নিয়ে চলে গেল তিন হিজড়া। আমি আর টুপিটা ফেরত চাওয়ারও সাহাস পেলাম না।
...............................................
ইন্ডিয়া ট্যুরে যাওয়ার আগে সিনিয়ররা বহু বিষয়ে বহু পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই বলেননি এই হিজড়াদের বিষয়ে বলেননি, বলেননি হিজড়ারা ছেলেদেরই 'অ্যাটাক' করে বেশী। বলেননি, হিজড়ারা চাওয়া মাত্র টাকা দিয়ে দিতে হয়। নইলে যা হয়, তা 'বিব্রতকর অভিজ্ঞতা' হিসেবে অনায়াসে 'রহস্যপত্রিকা'য় ছাপার জন্য দিয়ে দেয়া যায়। আমার উপর তা-ও কম-ই গেছে। কারও কারও অবস্থা তো আরও সঙ্গীন ছিল। ...
যা-ই হোক , একবারের অভিজ্ঞতা ফিরতি পথে বেশ কাজে দিল। ফেরার পথে ট্রেনে হিজড়ার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল তিনবার। প্রথমবার ট্রেনের উপরদিককার সীটে শুয়ে ছিলাম বলে আওয়াজ পাওয়া মাত্র উল্টো হয়ে কাথা মুড়ি দিলাম। ওরা টের পেল না, ওখানে আমি জেগেই আছি। ভদ্র ছিল বোধহয়,ঘুমিয়ে আছি মনে করে ডিসটার্ব করেনি। দ্বিতীয়বার দৌড়ে আশ্রয় নিলাম টয়লেটে। পাঁচজন একসাথে। হিজড়ারা চলে যাওয়ার পর চারজন বের হয়ে এলেও আমি বের হলাম আরও ৫ মিনিট পর- এক্সট্রা সিকিউরিটি। তৃতীয়বার ট্রেন থেমে ছিল বলে এক দরজা দিয়ে নেমে কিছুক্ষণ পর অন্য দরজা দিয়ে কামরায় ঢুকলাম। বেঁচে গেলাম তিনবার-ই। .............
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০০৮ রাত ১২:৪৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×